ওলকচু


বারি ওলকচু -১

বৈশিষ্ট্য: পত্রকগুলি ঘনভাবে বিন্যস্ত, একটার সাথে আরেকটা লেগে থাকে। ভূয়াকা-ে সাদা ছোপ ছোপ দাগগুলো বড় আকারের এবং অল্প সংখ্যক কাঁটা কাঁটা গঠন থাকে বিধায় ভূয়াকা-টি হালকা খসখসে হয়। প্রধান গুড়িকন্দ বড় আকারের হয়, প্রতিটি গুড়িকন্দ হতে গড়ে ৩-৩.৫ টি করমেল উৎপন্ন করে। গুড়িকন্দের মাংশল অংশ ক্রিম রঙের এবং ক্যারোটিন সমৃদ্ধ। একক গুড়িকন্দের ওজন ২-৫ কেজি।

হেক্টর প্রতি ফলন : ৪৫-৫৫ টন। 

উপযোগী এলাকা: বাংলাদেশে সব অঞ্চলেই উঁচু জমিতে চাষ করা যায়। 

বপনের সময়: মধ্য -মাঘ থেকে মধ্য-ফাল্গুন (ফেব্রুয়ারি- মধ্য মার্চ) মাস বীজ বপনের উপযুক্ত সময়। প্রয়োজনে মধ্য-চৈত্র থেকে মধ্য-বৈশাখ (এপ্রিল) মাসেও লাগানো যায় তবে এরপরে রোপণ করলে ফলন কমে যায়।

ফসল উত্তোলনের সময়: ২১০-২৭০ দিন পর।


বারি ওলকচু-২

বৈশিষ্ট্য: পত্রকগুলি হালকাভাবে  বিন্যস্ত, একটা থেকে আরেকটা পৃথক থাকে।  ভূয়াকা-ে সাদা ছোপ ছোপ দাগগুলো ছোট আকারের এবং অধিক  সংখ্যক কাঁটা কাঁটা গঠন থাকে বিধায় ভূয়াকা-টি বেশ খসখসে হয়। প্রধান গুড়িকন্দ মাঝারী  আকারের হয়, প্রতিটি     গুঁড়িকন্দ হতে গড়ে ৮-৯ টি করমেল উৎপন্ন করে। গুঁড়িকন্দের উপরের অংশ পার্পল রঙের, এর মাংশল অংশ হলুদ বর্ণের । একক গুঁড়িকন্দের ওজন ১-৩ কেজি। 

হেক্টরপ্রতি ফলন : ৩৫-৪৫ টন। 

উপযোগী এলাকা: বাংলাদেশে সব অঞ্চলেই উঁচু জমিতে চাষ করা যায়। 

বপনের সময়: মধ্য-মাঘ থেকে মধ্য-ফাল্গুন (ফেব্রুয়ারি) মাস বীজ বপনের উপযুক্ত সময়। প্রয়োজনে মধ্য-চৈত্র থেকে মধ্য-বৈশাখ (এপ্রিল) মাসেও লাগানো যায় তবে এরপরে রোপণ করলে ফলন কমে যায়। 

ফসল উত্তোলনের সময়: ২১০-২৭০ দিন পর।


উৎপাদন প্রযুক্তি

জমি নির্বাচন ও তৈরি: সু-নিষ্কাশিত এঁটেল দো-আঁশ, বেলে দো - আঁশ মাটি উপযোগী। অতিরিক্ত এঁটেল ও বেলে মাটিতে চাষ না করাই ভাল। মাটির ‘জো’ থাকা অবস্থায় মাটির প্রকারভেদে ৩-৪ টি আড়াআড়ি চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে নিয়ে ভাল করে মই দিয়ে মাটি চেপে দিতে হবে। 

বীজ তৈরি: সাধারণত বিভিন্ন আকারের মুখী এক/দুই বছর আবাদ করার পর যে গুঁড়িকন্দ তৈরি হয় তাই বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনের জন্য বীজ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এক্ষেত্রে ছোট আকারের গুঁড়ি কন্দগুলিকে এক বছর রোপণ করে বীজ তৈরি করতে হয়। 

বীজ বপনের সময়: মধ্য -মাঘ থেকে মধ্য-ফাল্গুন (ফেব্রুয়ারি) মাস বীজ বপনের উপযুক্ত সময়। প্রয়োজনে মধ্য-চৈত্র থেকে মধ্য-বৈশাখ (এপ্রিল) মাসেও লাগানো যায় তবে এরপরে রোপণ করলে ফলন কমে যায়। 

বীজ বপণের দূরত্ব: অন্যান্য ফসলের মত ওলকচুর জন্য কোন একক দূরত্ব নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। বীজের আকারের অসমতার জন্য বিভিন্ন আকারের বীজ বিভিন্ন দূরত্বে বপণ করতে হবে। 



স্বাভাবিক ও বাণিজ্যিক উৎপদনের জন্য বীজ বপনের দূরত্ব:

   বীজের আকার (গ্রাম)                                    বপনের দূরত্ব (সেমি)

স্বাভাবিক    বাণিজ্যিক                      স্বাভাবিক                        বাণিজ্যিক

৫০            ৪০০-৬০০              ৫০ সেমি X ৪০ সেমি  ৬০ সেমি X ৫০ সেমি

৫০-২০০    ৬০০-৮০০              ৬০ সেমি X ৪৫ সেমি  ৬০ সেমি X ৬০ সেমি

২০০-৪০০    ৮০০-১০০০              ৬০ সেমি X ৫০ সেমি  ৭৫ সেমি X ৬০ সেমি


বীজ বপনের পদ্ধতি: 

মুখী ও ছোট গুঁড়ি বপনের জন্য আলুর মত নির্দেশিত পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। লাঙ্গল দিয়ে লাইন তৈরি করে নির্দিষ্ট দূরত্বে বীজ বসিয়ে মাটি তুলে দিতে হবে বাণিজ্যিক উৎপাদনের জন্য নিদিষ্ট দূরত্বে গর্ত তৈরি করতে হবে। গর্তের আকার বীজের ব্যাসের চেয়ে একটু বড় হবে। গভীরতা হবে ব্যাসের তিন গুণ। তবে কন্দের ভিন্নতার উপর গত্রের আকার আকৃতি ভিন্ন হয়।


ফসলের পরিচর্যা

সার প্রয়োগ: আশানুরূপ ফলন পেতে হলে নিম্নলিখিত হারে সার প্রয়োগ করতে হবে।

সারের নাম                                সারের পরিমাণ/হেক্টর

গোবর বা আবর্জনা পচা সার               ২০ টন

ইউরিয়া                                     ৩২৫ কেজি

টিএসপি                                     ২১০ কেজি

এমপি                                     ১৭৫ কেজি


সম্পূর্ণ গোবর এবং ইউরিয়া ছাড়া অন্যান্য সারের অর্ধেক জমি তৈরির সময় প্রয়োগ করতে হবে। বাকি অর্ধেক বীজ বপনের গর্তে বা লাইনে প্রয়োগ করতে হবে। ইউরিয়া সমান বা ২ কিস্তিতে প্রয়োগ করতে হবে। রোপণের ৮০-৮৫ দিন পর ভালভাবে আগাছা পরিষ্কার করে প্রথমবার এবং ১১০-১১৫ দিন পর দ্বিতীয়বার প্রয়োগ করতে হবে।


পরিচর্যা: বীজ লাগানোর পরে যদি মাটির ‘জো’ না থাকে এবং বৃষ্টিপাত না হয় তবে সেচ দিতে হবে। দুই সারি বা প্রতি সারির পার্শ্ব দিয়ে হালকা নালা তৈরি করে দিতে হবে যাতে সহজেই বৃষ্টির পানি চলে যেতে পারে। ধান, গমের খড় বা কচুরিপানা দ্বারা আচ্ছাদন (মালচ) দিলে ফলন অনেক গুন বৃদ্ধি করা যায় এবং সহজেই আগাছা দমন করা যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, বিভিন্ন আচ্ছাদন ব্যবহার করে শতকরা ৭০-৭৫ ভাগ ফলন বৃদ্ধি করা সম্ভব। জমি সব সময় আগাছামুক্ত রাখতে হবে।


কীট পতঙ্গ ও রোগ বালাইয়ের প্রতিকার: ওলকচুর ক্ষেত্রে কীট পতঙ্গ ও রোগ বালাইয়ের তেমন কোন সমস্যা নেই। তবে মাঝে মাঝে লিফ বাইট (পাতা ও ডগা পচা রোগ), কলার রট প্রভৃতি রোগ দেখা দেয়।

লিফ বাইট: এ রোগে পাতা বেশি আক্রান্ত হয়। কোন কোন ক্ষেত্রে কা-তে ও লিফ বাইট রোগের লক্ষণ দেখা যায়। এ রোগের প্রতিকারের জন্য প্রতি লিটার পানিতে ২.০ গ্রাম ডায়থেন এম-৪৫ বা রিডোমিল এম জেড বা এক্রোবেট এম জেড ছত্রাকনাশক ১৫ দিন পর পর ৩ বার প্রয়োগ করতে হবে।

কলার রট: এ রোগ শস্যের বৃদ্ধির শেষের দিকে দেখা যায়। এ রোগে মাটির সংযুক্ত স্থান আক্রান্ত হয়। কলার রট রোগে আক্রান্ত গাছ মাটি থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে এবং শস্য পর্যায় অবলম্বন করতে হবে। আক্রান্ত গাছে ভিটাভ্যাক্স-২০০ প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম মিশিয়ে সিঞ্চন যন্ত্রের সাহায্যে প্রয়োগ করতে হবে।

ফসল সংগ্রহ:  একটি কন্দ থেকে ২-৪ টি পর্যন্ত ভূয়া কা- বের হতে দেখা যায়। একটি নতুন ভূয়া কা- বের হওয়ার পর পুরানটি মারা যায়। ক্ষেতে যখন শতকরা ৮০ ভাগ গাছ হলুদ হয়ে যায় তখন ফসল পরিপক্ক হবে এবং তখন থেকে ফসল সংগ্রহ করা যাবে। বীজের জন্য ক্ষেতের গাছ সম্পূর্ণ রূপে শুকিয়ে মারা যাওয়ার পর সংগ্রহ করতে হবে। বাজার মূল্য এবং বাজারের চাহিদা মোতাবেক ঠিকমতো বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হলে সংগ্রহ করতে হবে। অপরিপক্ক ওলও সংগ্রহ করা যেতে পারে।

বীজ সংরক্ষণ: ওলের গুড়িকন্দ, ক্ষুদ্রাকার গুঁড়িকন্দ ও মুখী বীজ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। বীজ তোলার সময় যদি ভিজা থাকে তবে তা হালকা রোদে শুকিয়ে শীতল স্থানে সংরক্ষণ করতে হয়। দীর্ঘ দিন সংরক্ষণ করতে হলে ছায়াযুক্ত মাটিতে সমানভাবে গর্ত করে তার ভেতর ওল পাশাপাশি সাজিয়ে ১৫-২০ সেমি বালি মিশ্রিত মাটি দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। বীজ যে জমিতে থাকে যদি অন্য কাজে প্রয়োজন না হয় তবে জমিতেই রেখে দেওয়া যায়। সেক্ষেত্রে লাগানোর ৩০-৩৫ দিন পূর্বে বীজ উঠিয়ে পুণরায় রোপণ করতে হবে।