ছাদে অথবা ঘরের বারান্দায় অথবা বাড়ির আঙ্গিনায় লেবু চাষ পদ্ধতি

ছাদে অথবা ঘরের বারান্দায় অথবা বাড়ির আঙ্গিনায় লেবু চাষ পদ্ধতি

লেবু ফলটির সাথে আমরা সকলেই পরিচিত। এটা আমাদের দেশে একটি জনপ্রিয় ফল। যেকোন অনুষ্টানে বা খাওয়া দাওয়ার সময় লেবু না হলে যেন চলেইনা। এই লেবু আপনি আপনার বাড়ির চিলেকোঠা বা ছাদে অথবা ঘরের বারান্দায় অথবা বাড়ির আঙ্গিনায় বা উঠোনে চাষ করতে পারেন। বাড়ির ছাদে দুই একটি লেবু গাছ থাকলে সারাবছর লেবুর চাহিদা মেটানো যায় ।

লেবু চাষে টব/মাটি তৈরি করবেন


লেবু চাষ করার জন্য সাধারণত হালকা দোআঁশ ও অম্লীয় মাটি নির্বাচন করা উচিত। কারণ এই সব মাটিতে লেবু চাষ করার জন্য সর্বোত্তম। এই মাটিতে লেবু চাষ করলে ব্যাপক ফলন পাওয়া যায়।


কি ধরণের টব/পাত্রের আকৃতি বাছাই করবেন


লেবু চাষ করার জন্য আপনাকে মাঝারি সাইজের টব বা ড্রাম নিতে হবে। কারণ লেবু গাছ যেহেতু বড় হয় তাই এই ক্ষেত্রে আপনাকে উক্ত পাত্র নির্বাচন করতে হবে। বাড়ির উঠোনে অথবা আঙ্গিনায় আপনি লেবু চাষ করতে পারেন।


জাত বাছাই করা 


আমাদের দেশে অনেক জাতের লেবু আছে। তবে তাঁর মধ্যে কিছু জাতের লেবু আছে অনেক উন্নত মানের। এর মধ্যে আছে বাউ কাগজি লেবু-১, বাউ লেবু-২, (সেন্টেড এলাচি) এবং বাউ লেবু-৩ (সেমি সিডলেস) অন্যতম ।


চাষ/রোপনের সঠিক সময়


আপনি ইচ্ছা করলে বছরের যেকোন সময়েই লেবু চাষ করতে পারেন। তবে লেবু চাষ করার জন্য সর্বোত্তম সময় হল বৈশাখ মাস থেকে আশ্বিন মাস পর্যন্ত। এই সময় লেবু গাছ লাগালে অনেক ভাল ফলন পাওয়া যায়।


বীজ বপন ও সঠিক নিয়মে পানি সেচ দিবেন


লেবু গাছ লাগানোর জন্য আপনাকে নিকটস্থ নার্সারী থেকে ভালো জাতের চারা সংগ্রহ করতে হবে। এছাড়াও আপনি ইচ্ছা করলে গুটি কলম ও কাটিং তৈরি করে লেবুর চাষ করতে পারেন। যে পাত্রে লেবু চাষ করবেন তাঁর তলায় কমপক্ষে তিন থেকে চারটি ছিদ্র করতে হবে, যাতে গাছের গোড়ায় পানি না জমে। টব বা ড্রামের তলার ছিদ্রগুলো ইটের ছোট ছোট টুকরো দিয়ে বন্ধ করে দিতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে লেবু গাছে পানি খুব কম প্রয়োজন হয়। তাই লেবু গাছে পানি দেওয়ার ক্ষেত্রে সঠিক মাপে পানি দিতে হবে।


লেবুর চাষাবাদ পদ্ধতি/কৌশল


লেবু গাছ লাগানোর ক্ষেত্রে প্রথমে আপনাকে মাটি তৈরি করতে হবে। সেজন্য বিভিন্ন ধরণের সার কে একত্রে মিশিয়ে টব বা পাত্রে ভরে পানি দিয়ে ভিজিয়ে রাখতে হবে ১০ থেকে ১২ দিন। কিছু দিন পর আবার পাত্রের মাটি খুচিয়ে দিতে হবে। এরপর দেখতে হবে মাটি ঝুরঝুরে হয়েছে কিনা। ঝুরঝুরে মাটিতে চারা লাগাতে হবে। চারা লাগানোর পর সঠিক নিয়মে সার ও কীটনাশক দিতে হবে। গাছ একটু বড় হলে কিছু দিন পর পর সরিষার খৈল পঁচা পানি হালকা করে গাছের গোড়ায় দিতে হবে।


সারের পরিমাণ ও সার প্রয়োগ


লেবু চাষের ক্ষেত্রে আপনি লেবু গাছের গোড়ায় বাড়িতে তৈরি জৈব সার দিতে পারেন। যেমন গোবর, হাড়ের গুড়া কাঠের ছাই ইত্যাদি দিতে পারেন। এছাড়াও অজৈব সার হিসাবে টিএসপি সার , পটাশ সার,  পাথর চুন ইউরিয়া ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারেন।


পোকামাকড় দমন ও বালাইনাশক/কীটনাশক কিভাবে প্রয়োগ করবেন


লেবু গাছে নিয়মিত কীটনাশক ও সার প্রয়োগ করতে হবে। বর্ষা আসার পূর্বে সাতদিন অন্তর অন্তর কয়েকবার ছত্রাকনাশক স্প্রে করলে ভাল হয়। তবে খেয়াল রাখতে হবে যখন গাছে ফুল বা ফল থাকবে তখন কীটনাশক স্প্রে করা থেকে বিরত থাকতে হবে।


লেবু বাগানের যত্ন ও পরিচর্যা করবেন


লেবু গাছের সঠিকভাবে যত্ন নিতে হবে। চারা রোপণের সময় খেয়াল রাখতে হবে, যাতে গাছের গোড়া থেকে মাটি সরে না যায়। চারা লাগাগোর পর গাছের গোড়ার মাটি কিছুটা উঁচু করে দিতে হবে। এবং খেয়াল রাখতে হবে গাছের গোড়ায় যেন পানি জমতে না পারে। গাছের গোড়ায় পানি জমে যেন স্যাঁতস্যাঁতে না হয়। লেবু গাছ কে সঠিক ভাবে বাড়তে দিতে হলে এর ডালপালা ছাটাই করতে হবে। গাছের মরা ও শুকনা ডালপালা কেটে গাছকে পরিষ্কার রাখতে হবে।


লেবুর খাদ্য গুণাগুণ


লেবু একটি প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সমৃদ্ধ ফল। লেবুতে প্রচুর ভিটামিন সি আছে ।  প্রতি ১০০গ্রাম লেবুতে প্রায় ৫৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি বা এসকরনিক এসিড পাওয়া যায়।


লেবুর ঔষধি গুনাগুন


লেবুতে অনেক ধরণের ঔষধি গুন রয়েছে। লেবুর রস মধু, লবণ ও আদা দিয়ে মিশিয়ে পান করলে ঠাণ্ডা ও সর্দি কাশি উপশম হয়। এছাড়াও লেবু রস ব্যবহারে হৃদ রোগের ঝুঁকি কমায়, শরীরের অতিরিক্ত মেদ কমে, দেহের ওজন কমায়, শরীরের রোগ সংক্রমণও কমে যায়। লেবুর সাইট্রিক এসিড ক্যালসিয়াম নির্গমন হ্রাস করে পাথুরী রোগ প্রতিহত করতে পারে। জ্বরে হলে লেবু খুবই উপকারী।


কখন লেবু ফল  সংগ্রহ করবেন


লেবু সাধারণত পরিপক্ক হলেই সংগ্রহ করতে হবে। পূর্নবয়স্ক লেবু পেড়ে সংরক্ষন করা যায়।


কি পরিমাণ লেবু পাওয়া যাবে


একটি পূর্ণবয়স্ক গাছ থেকে কমপক্ষে ১৪০-১৫০ টি লেবু পাওয়া যায়। এছাড়াও কিছু জাতের লেবু গাছ আছে যেগুলো থেকে সারা বছর ফলন পাওয়া যায়।


অন্যান্য ব্যবহার


লেবু খাওয়া ছাড়াও অনেক ব্যবহার আছে। কাপড়ে দাগ পড়লে অথবা রুপচর্যায় লেবুর রস অনেক উপকারী। লেবুর রস ব্যবহার করে মুখের ব্রণ দূর করা যায়। এবং বয়সজনিত মুখের দাগ সারাতে লেবুর রসের তুলনা নেই।