তিসি থেকে তেল এবং আঁশ পাওয়া যায়। তেল ফসল হিসেবে জমির পরিমানের দিক থেকে সরিষা, তিল এবং সয়াবিনের পরই তিসির স্থান।
পুষ্টিমূল্য/উপাদানঃ প্রোটিন, তেল, কার্বোহাইড্রেট, ছাই, আঁশ বিদ্যমান।
ব্যবহারঃ যন্ত্রপাতির জন্য গ্রিজ ও সাবান তৈরিতে ব্যবহার করা হয়।
উপযুক্ত জমি ও মাটিঃ এঁটেল মাটি তিসি চাষের জন্য সবচেয়ে বেশি উপযোগী। পলি দো-আঁশ ও এঁটেল দো-আঁশ মাটিতেও এর চাষ করা যায়।
জাত পরিচিতিঃ নীলা (লিন-১)
জাতটি বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নির্বাচন করা হয়েছে এবং ১৯৮৮ সালে জাতীয় বীজ বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত হয়। জাতটির বৈশিষ্ট্য হলো-বীজ ছোট ও চেপ্টা। ফল ১০০০ বীজের ওজন ৩.০-৩.৫ গ্রাম। ফুলের রং নীল। বীজ হাতে ধরলে পিচ্ছিল অনুভূত হয়। বীজে তেলের রিমাণ শতকরা ৩৮ ভাগ। হেক্টর প্রতি ফলন ৮৫০-৯৫০ কেজি।
বীজ বপনঃ কার্তিক মাস (মধ্য অক্টোবর হতে বীজ ছিটিয়ে বপন করতে হয়। তবে সারিতে বপন করলে সারি থেকে সারির দূরত্ব হবে ৩০ সে.মি.।
বীজের হারঃ ৭-৮ কেজি/হেক্টর।
সার ব্যবস্থাপনাঃ সাধারণত তিসি বিনা সারে চাষ করা হয়। তবে ভালো ফলন পেতে হলে নিম্নরূপ হারে সার প্রয়োগ করতে হবে।

সার              

হেক্টর প্রতি সারের পরিমাণ (কেজি)

ইউরিয়া         

৭০-৮০

টিএসপি        

১১০-১৩০    

এমওপি         

৪০-৫০

ইউরিয়া সার অর্ধেক ও বাকি অন্যসব সার শেষ চাষের সময় জমিতে মিশিয়ে দিতে হবে। বাকি অর্ধেক ইউরিয়া বীজ বপনের ২৫-৩০ দিন পর প্রয়োগ করতে হবে।
সেচ ও আগাছা ব্যবস্থাপনাঃ প্রয়োজনে ১-২ বার সেচ দিতে হবে। আর জমিতে আগাছা থাকলে সময়মতো আগাছা দমন করতে হবে।
রোগবালাই ব্যবস্থাপনাঃ
রোগের নামঃ পাতা ঝলসানো রোগ
অলটারনেরিয়া লিনি নামক একপ্রকার ছত্রাকের সাহায্যে এ রোগ ছড়ায়। এটি একটি বীজবাহিত রোগ। প্রথমে পাতার উপর ঘন বাদামী রঙের অসম আকৃতির দাগ পড়ে। রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পেলে পাতা শুকিয়ে যায়। বাতাসের সাহায্যে এ রোগ বিস্তার লাভ করে।
ব্যবস্থাপনাঃ বীজ বপনের পূর্বে প্রতি কেজি বীজে ২.৫ গ্রাম ভিটাভেক্স-২০০ দিয়ে বীজ শোধন করতে হবে। আগাছা দমনসহ ফসলের পরিচর্যার মাধ্যমে রোগের প্রাদুর্ভাব কমানো যায়। গাছে এ রোগের লক্ষণ দেখা দেয়া মাত্র প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম রোভরাল-৫০ ডব্লিউপি মিশিয়ে ১০ দিন পরপর ৩ বার স্প্রে করতে হবে।
ফসল তোলাঃ তিসি ফাল্গুন-চৈত্র মাসে পাকে। পাকলে গাছ এবং ফল সোনালী বা কিছুটা তামাটে রং ধারণ করে। ফল ভালভাবে পাকার পরই গাছ কাটা বা উপড়ানো উচিৎ। ফসল কেটে বা উপড়িয়ে নেয়ার পর গাছগুলো ছোট ছোট আঁটি বেঁধে বাড়ির আঙ্গিনায় স্তুপ করে রাখা যায়। জীবনকাল ১০০-১১৫ দিন।