স্বপ্ন মানুষ তখনই দেখে যখন তার জীবনে অসম্পূর্ণতা থেকে যায় ৷ বাংলাদেশের কৃষি তার সাফল্যের ধারাকে অব্যাহত রেখে এগিয়ে চলেছে ৷ সুমন মিয়া মাঠে কাজ করে সকাল থেকে রাত অবধি ৷ বিরতিহীন তার কাজ , কখনো অবসর নাই ৷ তার মধ্যে এখন আবার পাট কাটার সময় ৷ একইসাথে চলছে পাট কাটা এবং ধান রোপণ , সাথে তো ফল, সবজি আছেই, কাজ তাকে একা হাতেই করতে হয় কারণ, এখন কাজের জন্য শ্রমিক পাওয়া খুবই কঠিন । শ্রমিকের মূল্যও এখন তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি ৷

আজ কাজের চাপ ছিল বেশি , বাড়িতে গিয়ে খাওয়ার পরই সে বসে চিন্তা করতে থাকে : যদি তার অনেক জমি থাকতো তবে সে হয়তো একজন সফল কৃষক হতে পারতো ৷ ক্লান্ত শরীরে এসব চিন্তা করতে করতে একসময় ঘুম চলে আসে ৷ তারপরই সে বিভোর হয়ে যায় স্বপ্নের জগতে ৷

সুমন মিয়ার সকালের ঘুম ভাঙে মোবাইলের রিংটোনে, তাকিয়ে দেখে, ভিডিও কলটি করেছে তারই এক কৃষক বন্ধু ইমরান, পাশের গ্রামে থাকে ৷

ইমরান সকালে মাঠে গিয়ে তার ধানের জমিতে নতুন একটা পোকা দেখতে পেয়েছে যা এর আগে কখনো দেখেনি , মোবাইলের স্ক্রিনে ছবিটি দেখার সাথে সাথে সুমন তার বন্ধুকে বলে নতুন কৃষি পোর্টাল অ্যাপস এ ক্লিক করে ছবিটার ওপর রাখলে কয়েক মিনিটের মধ্যেই উত্তর চলে আসবে ৷ ফোন রাখার পর সুমন চিন্তা করে যে, দুনিয়াটা কতো বদলে গেছে ৷ আগে যেসব অ্যাপস ছিল তা দিয়ে ছবির সাথে মিলানোর পর উত্তর পাওয়া যেত, আর এখন যেকোনো নতুন সমস্যার ছবি তুলে দিলে সাথে সাথে উত্তর পাওয়া যায় ৷ সুমন হাত মুখ ধুয়ে চায়ে কেবল চুমুক দিয়েছে তৎক্ষণাৎ ফোন এলো রাজশাহী থেকে ৷ সুমন মিয়া পাবনার সাদুল্লাপুর ইউনিয়নের একজন কৃষক ৷ এখন আম পাকার সময় ৷ এ কারণেই রাজশাহী থেকে ফোন এসেছে যাতে আমগুলো সময়মতো ট্রাকে তুলে দেয় ৷ এখন গ্রামের কোনো কৃষকের উৎপাদিত ফল সবজি পচে যায় না অথবা নায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হয় না । তাই গ্রামের সব কৃষক একইসাথে শস্য, সবজি, ফল উৎপাদন করছে ৷ সুমন মাঠে এসে দেখে, ফল , সবজি ঘরে ওঠার আগেই ট্রাকে করে চলে যায় বিভাগীয় শহরে এবং সেখান থেকে এগুলো মূল্য সংযোজনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর রপ্তানি করা হবে দেশের বাহিরে ৷ সুমন চোখ বন্ধ করে ভাবে দশ বছর আগের কথা : তাদের জমিতে সেবছর অনেক ধান হয়েছিল, কিন্তু ধান কাটার পর নায্যমূল্য না পাওয়ার কারণে সুমনের বাবা অনেক কান্নাকাটি করেছিল ৷ এভাবে শুধু সুমনের ভাগ্য পরিবর্তনের সাথে সাথে আজ সকলের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটেছে ৷ সুমন মাঠের দিকে তাকায় , এখন আর কোনো ফসল চাষ করার জন্য রাসায়নিক সার জমিতে দিতে হয় না ৷ কীটনাশক তো একেবারেই দিতে হয় না । কারণ বেশিরভাগ জাতই রোগ ও পোকা সহনশীল ৷ এখন যা আছে তার অধিকাংশই উপকারী পোকা ৷

সুমন চোখ বন্ধ করে ভাবে সেসব মানুষের কথা যারা এত জাত তৈরি করেছে , আর মনে করে ঐ কৃষি অফিসের অফিসারদের কথা যারা তাদের সবসময়ই যথাযথ পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করছে ৷ কিছুক্ষণ পরই সুমনের ফোনে ভিডিও কল আসে কৃষি অফিস থেকে , জানতে চাওয়া হয়, এখন তাদের কোনো সমস্যা আছে কিনা ?
শুধু সুমনই নয়, সব কৃষকের মাঠের অবস্থা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করার জন্য সব ফসলের ক্ষেতে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা লাগানো হয়েছে বলে কোনো একটি সমস্যা কৃষকের নজরে পড়ার আগেই তা কৃষি অফিসের আইটি সেকশনের নজরে চলে আসে ৷ সুমন একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে , যে তার জীবনটা রূপকথার গল্পের মতোই বদলে গেছে ৷

হঠাৎ ঘুমটা ভেঙে যায় সুমনের ৷ ঘুম থেকে জেগে ওঠার পর তার শুধু স্বপ্নের কথাই মনে হয় ৷ সুমনের মতো সকল কৃষকের স্বপ্ন একদিন বাস্তব রূপ নিবে ৷ শুধু সুমনের ভাগ্যই নয় বরং পরিবর্তন হবে দেশের ভাগ্য ৷ পরিপূর্ণ হবে ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন ৷